শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৯ পূর্বাহ্ন

আপডেট
দুর্নীতিবাজদের তালিকা হচ্ছে

দুর্নীতিবাজদের তালিকা হচ্ছে

দুর্নীতিবাজদের তালিকা হচ্ছে

শায়লা জামান : সরকার এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে হার্ড লাইনে আছে। কঠোর অবস্থান ঘোষণা করেছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আর এ কারণেই শীর্ষ পদে বিভিন্ন সময়ে যারা ছিলেন, বা অবসরে গেছেন তাদের মধ্যে যারা দুর্নীতিবাজ করে শত শত কোটি কোটি বানিয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র প্রতিদিনের কাগজকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। বেনজীর আহমেদের এই ঘটনা সারা দেশে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, সরকার এই ঘটনায় হতবাক। অনেকেই জানতেন যে, বেনজীর আহমেদ দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তা কিন্তুক কেউ ভয়ে মুখ খুলতেন না। বিশেষ করে র‌্যাবের মহাপরিচালক হওয়ার পর থেকে তিনি দুর্নীতির দিকে ঝুঁকে পড়েন তিনি। একদা এই মেধাবী কর্মকর্তার বহু অবদান থাকার পরও দুর্নীতির কারণে তিনি পুলিশ প্রধান থাকা অবস্থাতেই তার সহকর্মীদের কাছে সমালোচিত হয়েছিলেন। কিন্তু কেউ তার ভয়ে মুখ খুলতে পারত না। বিশেষ করে যারাই তার দুর্নীতির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আপত্তি জানাত, তাদেরকে তিনি কঠোর কঠোর শাস্তি দিতেন, অগুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বদলি করতেন।

বেনজীর আহমেদের এই দুর্নীতির ঘটনা একটি দৈনিকে প্রকাশের পর দুর্নীতি দমন কমিশন তা অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধান করতে গিয়ে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন যে, তারা কল্পনাও করতে পারেননি যে, বেনজীর আহমেদের এরকম সীমাহীন দুর্নীতি এবং অর্থ আত্মসাতের ঘটনা লুকিয়ে আছে। আর এ কারণেই ঘটনাটি তাদের চোখ-কান খুলে দিয়েছে। এখন দুর্নীতি দমন কমিশন বিভিন্ন সময়ে যারা শীর্ষ পদে আছে বা অবসরে গেছেন তাদের তালিকা তৈরী করছে। এদিকে ময়মনসিংহ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ন্যাশানাল সার্ভিস কর্মসূচী প্রকল্পে ২৯২ কোটি টাকা দুর্নীতির ঘটনা সামনে আসে। দুদক তদন্তে নামে। সারাদেশে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এবার অবৈধ সম্পদ অর্জনের আলোচনায় সিনিয়র জেল সুপার সুভাস কুমার ঘোষ, সাবেক ওসি মাহামুদুল ইসলাম, সাবেক সিভিল সার্জন ডাঃ মাহাবুবুর রহমান, ময়মনসিংহ বিভাগের একজন পুলিশ সুপার , সাবেক ২২ জন ওসি, তিনজন সাবেক এডিশনাল এসপি, ভালুকা উপজেলা চেয়ারম্যান হাজী রফিকুল ইসলাম রফিক, ৯ জন জেলার, ৭ জন জেল সুপারসহ মোট ২৩৪ জনের দুর্নীতির অনুসন্ধানের কাজ করছে দুদক।

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়িত্ব সূত্রগুলো বলছে যে, বিভিন্ন সময়ে শীর্ষ পদে থাকা ব্যক্তিরা শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হবার পর কত সম্পত্তির মালিক ছিলেন এবং এখন তাদের বিত্ত-বৈভব কেমন, এই বিষয়গুলো নিয়ে অনুসন্ধান করা হচ্ছে এবং তাদের দুর্নীতি সম্বন্ধে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তবে দুদক একাই নয়, সরকারের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র বলছে, দুর্নীতি দমন কমিশন ছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর এবং সরকারি অন্তত দুটি সংস্থাকে এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা মূলত দেখবেন যে, চাকরি জীবনের শুরুতে তার কী অবস্থা ছিল, চাকরি জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে তার সম্পদের কী পরিমাণ স্ফীতি হয়েছে এবং অবসর গ্রহণের পর তার সম্পদ কতটুকু বেড়েছে- সেই হিসাবগুলো তারা করবেন।

তবে সরকারি সূত্রগুলো বলছে, কাউকে হয়রানি বা আতঙ্কে ফেলার জন্য নয়, যারা দুর্নীতিবাজ হিসেবে সামাজিকভাবে পরিচিত এবং যাদেরকে নিয়ে বিভিন্ন ধরনের কথাবার্তা আছে বা ছিল তাদের ব্যাপারে এই ধরনের তদন্তগুলো করা হবে। এই তদন্তের মাধ্যমে যারা প্রকৃত দুর্নীতিবাজ হিসাবে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হবেন তাদের বিরুদ্ধে বেনজীরের মতোই আইনি প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, পুলিশ প্রশাসন এবং প্রশাসন ক্যাডারের বিভিন্ন কর্মকর্তার নামে বিভিন্ন সময়ে মুখরোচক আলোচনা হয় এবং তাদের নানারকম দুর্নীতির কাহিনী প্রায়ই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। এ সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে এখন দুর্নীতি দমন কমিশন এবং অন্যান্য সংস্থাগুলো নির্মোহভাবে তদন্ত করবে।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |